গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিন টেকনোলজির জন্য বিশ্ববিখ্যাত। তারা তাদের ইকোসিস্টেম এমনভাবে তৈরি করেছে যে ওয়েবসাইট তৈরি করার পর তা ইন্টারনেটে পাবলিশ করা এবং মনিটর করে তা থেকে ইনকাম করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল টুল তাদের কাছেই পাবেন।
এ জন্য আপনাদের কোন থার্ড পার্টির সার্ভিস ব্যবহার করার প্রয়োজন পরবে না। যাইহোক আমাদের আজকের লেখায় ওয়েবসাইট মনিটর করার টুল গুগল এনালাইটিক্স কি, এর কাজ কি এবং সুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ধরুন, আপনি একটি নৌকা তৈরি করার যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। এই ধরনের প্রোডাক্টের প্রতি চাহিদা থাকবে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক বা মধ্য বয়সের মানুষের। একজন ২০ বছরের তরুণ কখনোই টাকা খরচ করে নৌকা বানানোর সামগ্রী ক্রয় করতে চাইবে না।
অর্থাৎ আপনাকে জানতে হবে কোন গ্রুপের মানুষের জন্য প্রোডাক্ট তৈরি করলে লাভবান হতে পারবেন। এখন ওয়েবসাইট তৈরি করার পর বিভিন্ন সমস্যা এবং ভিজিটর মনিটর করার জন্য আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে আপনার পণ্য সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
ওয়েবসাইট এবং ভিজিটর মনিটর করার জন্য গুগল একটি অতি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম চালু করেছে যাকে আমরা গুগল এনালাইটিক্স হিসেবে চিনি। এটি গুগলের ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট শাখার একটি প্রোগ্রাম। সাধারণত এই টুল ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিক পর্যালোচনা করে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য বের করা হয়। গুগল এনালাইটিক্স ওয়েবসাইটে কোথায় থেকে ট্র্যাফিক আসে, কতক্ষণ কোন পেজে থাকে, কোন কোন পেজ ভিজিট করে, ভিজিটরের জেন্ডার এবং বয়স ইত্যাদি খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
এই সকল তথ্য মার্কেটিং করার কাজে লাগার সাথে সাথে পুরো ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করতে সহায়তা করে। সহজ কথায় বলতে গেলে একটি ওয়েবসাইটের ভেতরে কি কি হয় তা ভিজ্যুয়ালভাবে ওয়েবমাস্টারকে দেখতে এবং পর্যালোচনা করতে গুগল এনালাইটিক্স সাহায্য করে।
গুগল এনালাইটিক্স এর কাজ কি?
গুগল এনালাইটিক্স বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। নিচে পর্যায়ক্রমে এর কাজগুলো বর্ণনা করা হলো।
ডেটা কালেক্টঃ যখন গুগল এনালাইটিক্সে সাইন আপ করা হয় তখন সেখান থেকে একটি ট্র্যাকিং আইডি দেওয়া হয়। এই ট্র্যাকিং আইডি দিয়ে গুগল ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করে। গুগলের ডেটা ট্র্যাকিং স্পিড অনেক বেশি থাকার কারণে দ্রুত লাইভ ডেটা পাওয়া যায়।
মূলত এই ডেটার উপর ভিত্তি করে তারা সকল ধরনের পর্যালোচনা করে। শেষে রিপোর্ট তৈরি করে তা ওয়েবসাইট মালিকের কাছে প্রেরণ করে।
ডেটা পর্যালোচনাঃ ডেটা কালেক্ট করার পর সর্বপ্রথম কাজ হলো ডেটা ফিল্টার করা। গুগল তাদের টুল ইউজ করে ডেটা পর্যালোচনা করে। সাধারণত গুগলের কাছে যখন ডেটা এসে পৌঁছায় তখন তারা কয়েকটি পূর্ব নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে এগুলোকে সুন্দর করে সাজায়।
এই পূর্বনির্ধারিত মানদণ্ডের মধ্যে বয়স, জেন্ডার, দেশ, ভাষা, ডিভাইস ইত্যাদি থাকে। অর্থাৎ আপনি যখন একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তখন উক্ত ওয়েবসাইটের মালিক গুগল এনালাইটিক্স ব্যবহার করে আপনার ডেটা ফিল্টার করে দেখতে পারে।
পারফর্মেন্স পরিমাপঃ গুগল এনালাইটিক্স একটি ওয়েবসাইটের সর্বোপরি পারফর্মেন্স পরীক্ষা করে। এখানে লোড টাইম সহ বাউন্স রেট, ইউজার বিহেভিয়ার, ইম্প্রেশন ইত্যাদি হিসেব করা হয়। এতে ওয়েবসাইটের মালিক তার পুরো ওয়েবসাইট সম্পর্কে ইউজার কি মনে করে এবং সেখানে কীভাবে বিচরণ করে তার একটি ইন-ডেপ্থ ধারণা লাভ করে।
কনটেন্ট ইমপ্রুভমেন্টঃ ইউজার পারফর্মেন্স গুগল এনালাইটিক্স এর অনেক বড় একটি অংশ। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের কনটেন্ট কেমন এবং তা ভিজিটরদের জন্য দরকারি কিনা তা বোঝার জন্য গুগল এনালাইটিক্স ইউজার ইম্প্রেশন বিবেচনা করে কনটেন্ট ইম্প্রুভ করার ধারণা দিয়ে থাকে।
এতে আপনি যেমন কনটেন্টের মান উন্নত করতে পারবেন তেমনি ভিজিটরের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন। তাছাড়া গুগল সার্চে র্যাঙ্কে থাকতে হলে উঁচু মানের কনটেন্টের কোনো বিকল্প নেই।
মার্কেটিং মেথড তৈরিঃ কোন পণ্য বা সার্ভিসের সাফল্য নির্ভর করে মার্কেটিং এর উপর। সঠিক মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন পরে ইউজার ডেটার। গুগল এনালাইটিক্স ব্যবহার করে আমরা ইউজার সম্পর্কিত সকল ধরনের ডেটা পাই।
এই তথ্য গুলো পর্যালোচনা করে যদি মার্কেটিং ক্যাম্পেইন তৈরি করা যায় তবে সার্ভিস বা পণ্য সঠিক মানুষের কাছে পাঠানো সম্ভব। এতে নেগেটিভ মার্কেটিং বা স্প্যাম মার্কেটিং হওয়ার সম্ভাবনা একদম কমে যায়। অন্যদিকে মার্কেটিং খরচ কমে যায় এবং সেল বেড়ে যায়। মোটকথা, গুগল এনালাইটিক্স ওয়েবসাইট এনালাইজ করে আমাদের সঠিক মার্কেটিং পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করে।
ভিজিটর সম্পর্কে ধারণাঃ ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিজিটর আসে। কোন বয়সের কে কোন ডিভাইস দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করছে তা একজন ওয়েবমাস্টার হিসেবে জানা অতি জরুরি। এই তথ্য গুলো একাধারে আমাদের মার্কেটিং এ সাহায্য করে অন্যদিকে ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করতে কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
পেজ অপটিমাইজেশনঃ ওয়েবসাইট স্পিড অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া একটি পেজে লেখা, ছবি, ভিডিও কীভাবে সাজালে তা ভিজিটরকে বিরক্ত না করে স্বাভাবিক ফিল করাবে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে গুগল এনালাইটিক্স অনেক সাহায্য করে।
ওয়েবসাইটের ওভারঅল পারফর্মেন্স নির্ভর করে পেজ অপটিমাইজেশনের উপরে। তাই আমাদের এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হয় যেখানে ডেটা দিয়ে পর্যাপ্ত সাহায্য করে গুগল এনালাইটিক্স।
ই-মেইল নির্ভর ডেটাঃ ই-মেইল বা অন্যান্য শেয়ারিং মাধ্যম ওয়েবসাইট কেমন প্রভাব ফেলছে তা জানার জন্য গুগল এনালাইটিক্স টুল অনেক কার্যকরী। কোন ওয়েবসাইট যত বেশি শেয়ার হয় তা তত বেশি ভিজিটর পায়। ভিজিটর যত আসে পণ্য বিক্রি তত বেড়ে যায়।
কোন পেইড মার্কেটিং ব্যতীত প্রচুর ভিজিটর আশা ওয়েবসাইটের মালিকের জন্য সোনায় সোহাগা। কারণ প্রতি বছর মার্কেটিং এর উপরে অনেক বেশি পরিমাণ খরচ করতে হয়। কনটেন্ট অপ্টিমাইজ করে যদি মেইন এবং সোশ্যাল শেয়ারের মাধ্যমে এত ভিজিটর আসে তাহলে তো কোন কথাই নেই।
কাস্টম রিপোর্টঃ গুগল এনালাইটিক্স সাইটে কি পরিমাণ ভিজিটর আসে, কখন আসে, কোন মাধ্যমে আসে, কি ডিভাইস ইউজ করে এবং কোন কোন পেজ ভিজিট করে ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য সুন্দরভাবে প্রসেস করে তা একটি কাস্টম রিপোর্টের মাধ্যমে আমাদের শো করে।
এই কাস্টম রিপোর্টে যে যে তথ্য থাকে তা দিয়ে আমরা ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ থেকে শুরু করে কনটেন্ট, পেজ অপটিমাইজেশন, মার্কেটিং, ইউজার কনভার্সন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করি। সাথে সাথে এগুলো কীভাবে ফিক্স করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা পাই।